সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন সব খুঁটিনাটি
সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা, আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য সাগর কলা খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর সাগর কলা পাওয়া যায় এ কলার দাম কম এবং ফলন ভালো হয়।
এই কলার দাম কম হওয়ার কারণে সাধ্যের মধ্যে অনেকেই খেতে পারে। সাগর কলা খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের নানা রকম সমস্যা সমাধান করে থাকে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
- সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
- সাগর কলার ১৫টি উপকারিতা
- সাগর কলার অপকারিতা
- কলা খাওয়ার উপকারিতা কি
- গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা
- সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি
- রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
- দুধ কলা একসাথে খাওয়ার উপকারিতা
- পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা
- কলা খাওয়ার অপকারিতা
- কলাতে থাকা পুষ্টি উপাদান
- নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা
- শেষকথাঃ সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা, আমাদের আশেপাশে অনেক ধরনের ফল পাওয়া যায়, যার মধ্যে সাগর কলা একটি বিশেষ ফল। সাধারণ কলার মতোই দেখতে হলেও এর স্বাদ, গঠন ও পুষ্টিগুণে রয়েছে কিছু ভিন্নতা। সাগর কলা শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং এতে ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবারের মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য উপকারী। বিশেষ করে শক্তি জোগানো, হজমে সহায়তা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ডালিম খেলে কি হয়?
তবে যেকোনো খাবারের মতোই সাগর কলারও কিছু সীমাবদ্ধতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। অতিরিক্ত খাওয়া বা বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমনডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উচ্চ শর্করা সমস্যা তৈরি করতে পারে, আবার অতিরিক্ত সেবনে হজমের গোলমালও হতে পারে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক সাগর কলার উপকারিতা সম্পর্কে।
সাগর কলার ১৫টি উপকারিতা
শরীরকে শক্তি যোগায়ঃ সাগর কলায় প্রাকৃতিক শর্করা (গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ) রয়েছে যা দ্রুত শক্তি প্রদান করে এবং শরীরকে চাঙ্গা রাখে।
পরিপাক যন্ত্রের জন্য ভালোঃ এতে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রতিরোধ করে।
হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখেঃ সাগর কলায় থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
রক্ত শূন্যতা প্রতিরোধ করেঃ এতে লৌহ রয়েছে যা রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে।
হাড় ও দাঁতের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ সাগর কলায় ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় হাড় ও দাঁতকে মজবুত করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ সাগর কলায় ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ এতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম এবং পটাশিয়াম বেশি থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ওজন বাড়াতে সাহায্য করেঃ যারা স্বাভাবিকভাবে ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য সাগর কলা খুবই কার্যকর, কারণ এতে ক্যালরি ও প্রাকৃতিক শর্করা বেশি থাকে।
মানসিক চাপ কমায়ঃ এতে থাকা ট্রিপ্টোফ্যান শরীরে সেরোটোনিন হরমোন তৈরি করে যা মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায়ঃ ভিটামিন এ, সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি ত্বককে উজ্জ্বল রাখে এবং বলিরেখা কমায়।
চোখের জন্য উপকারীঃ ভিটামিন এ থাকায় চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায় এবং রাতকানা প্রতিরোধ করে।
শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিঃ প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকার কারণে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
প্রসাবে জ্বালা কমায়ঃ সাগর কলা প্রস্রাবের সময় জ্বালা কমাতে এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য ভালোঃ গর্ভাবস্থায় সাগর কলা খেলে মা ও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও শক্তি সরবরাহ হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যও কমে।
ক্রীড়াবিদদের জন্য উপকারীঃ ব্যায়াম বা খেলাধুলার পর শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধারে সাগর কলা খুবই উপকারী, কারণ এটি পেশীর।
সাগর কলার অপকারিতা
অতিরিক্ত ক্যালরি ওজন বৃদ্ধিঃ সাগর কলা তুলনামূলকভাবে আকারে বড় ও মিষ্টি হওয়ায় এতে ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে। অতিরিক্ত খেলে শরীরে চর্বি জমে ওজন দ্রুত বাড়তে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকারকঃ সাগর কলার প্রাকৃতিক চিনি অনেক বেশি। ডায়াবেটিস রোগী বেশি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারেঃ সাগর কলা কাঁচা অবস্থায় বা বেশি খেলে শরীরে ফাইবারের ভারসাম্য নষ্ট হয়। এতে হজমে সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
অতিরিক্ত খেলে পটাশিয়ামের ভারসাম্যহীনতায় দেখা দেয়ঃ সাগর কলায় পটাশিয়াম বেশি থাকে। একবারে অনেক খেলে শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম জমে কিডনির ওপর চাপ পড়তে পারে, এমনকি হৃদযন্ত্রের কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলতে পারে।
গ্যাস ও এসিডিটি সমস্যাঃ যাদের পাকস্থলীতে এসিডিটির প্রবণতা বেশি, তাদের জন্য সাগর কলা সমস্যা বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত খেলে পেটে গ্যাস, ফুলে যাওয়া, বুক জ্বালা ইত্যাদি হতে পারে।
মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারেঃ সাগর কলায় টায়রামিন নামক একটি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কে রক্তনালী সংকুচিত করে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের আক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
কিডনি রোগীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণঃ কিডনির রোগীরা যদি বেশি সাগর কলা খান, তবে অতিরিক্ত পটাশিয়াম শরীর থেকে বের হতে না পেরে রক্তে জমে যায়। এতে হাইপারকালেমিয়া হতে পারে, যা হৃদযন্ত্রের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
এলার্জির সম্ভাবনা রয়েছেঃ কিছু মানুষের ক্ষেত্রে কলা খাওয়ার পর চুলকানি, ফুসকুড়ি, ঠোঁট ফুলে যাওয়া বা শ্বাসকষ্টের মতো অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
দাঁতের ক্ষতিঃ সাগর কলার মিষ্টি অংশ দাঁতে লেগে থাকে এবং মুখে ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়। নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করলে দাঁতের ক্ষয় ও ক্যাভিটি হতে পারে।
হজমের সমস্যা ও ডায়রিয়াঃ অতিরিক্ত পাকা কলা একসাথে বেশি খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। আবার অনেকে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া বা পেট খারাপের সমস্যায় ভুগতে পারেন।
কলা খাওয়ার উপকারিতা কি
কলা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এতে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও আঁশ (ফাইবার) রয়েছে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
শক্তি যোগায়ঃ কলায় প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা দ্রুত শক্তি প্রদান করে।
হজমের সহায়কঃ কলায় থাকা ডায়েটারি ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতেঃ কলায় পটাশিয়াম প্রচুর থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ ফাইবারের কারণে পেট ভরাট অনুভূতি দেয়, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কম হয়। ডায়েট মেনুতে কলা রাখা যেতে পারে।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়ঃ কলার ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়ক।
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়ঃ কলায় আয়রন থাকে যা রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া) দূর করতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমায়ঃ কলায় ট্রিপটোফ্যান নামক উপাদান থাকে যা সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়ে মুড ভালো রাখে। দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা দূর করতে সহায়তা করে।
মানসিক চাপ কমায়ঃ কলায় ট্রিপটোফ্যান নামক উপাদান থাকে যা সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়ে মুড ভালো রাখে। দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা দূর করতে সহায়তা করে।
অস্থি মজবুত করেঃ পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারীঃ বমি ও বমিভাব কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ ভিটামিন সি শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
চর্মসৌন্দর্য রক্ষা করেঃ কলায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে ত্বকের বার্ধক্য বিলম্বিত হয়। ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ রাখতে সহায়তা করে।
পেটের আলসার প্রতিরোধ করেঃ কলার প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অ্যাসিড উপাদান পাকস্থলীর অ্যাসিড কমায়।গ্যাস্ট্রিক ও আলসার রোগীদের জন্য উপকারী।
দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখেঃ কলায় থাকা ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টি শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।
শরীর ঠান্ডা রাখেঃ কলা শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। জ্বর বা গরম আবহাওয়ায় কলা খাওয়া আরাম দেয়।
কিডনি ভালো রাখেঃ নিয়মিত পরিমাণমতো কলা খাওয়া কিডনির কার্যকারিতা ভালো রাখে।
গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়া বেশ উপকারী হতে পারে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার যা গর্ভবতী মায়ের এবং গর্ভস্থ শিশুর জন্য উপকারী। তাহলে জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় কাঁচা কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ গর্ভাবস্থায় অনেক সময় হরমোন পরিবর্তনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। কাঁচা কলায় উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকায় এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
আয়রনের ঘাটতি পূরণে সহায়কঃ কাঁচা কলায় আয়রন থাকে যা গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও আয়রন, যা রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং গর্ভস্থ শিশুর রক্ত গঠনে ভূমিকা রাখে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে কি হয়
শক্তি যোগায়ঃ কাঁচা কলায় শর্করা থাকে, যা ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগায়। এটি গর্ভবতী মায়েদের ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক।
হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারীঃ এতে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে, যা মা ও শিশুর হাড় ও দাঁত মজবুত করতে সাহায্য করে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধ করেঃ কাঁচা কলা হজম প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পাতলা পায়খানা (ডায়রিয়া) কমাতে সহায়তা করে।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করেঃ কাঁচা কলায় রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ থাকে যা ধীরে হজম হয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়তে দেয় না। ফলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ এটি সহজপাচ্য এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি রোধ করতে সাহায্য করে, যা গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি কমায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ কাঁচা কলায় পটাশিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়কঃ কাঁচা কলায় ভিটামিন বি৬ থাকে, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
হজম সহায়ক ও গ্যাস কমায়ঃ কাঁচা কলা রান্না করে খেলে পাকস্থলীতে গ্যাস জমে না এবং হজম শক্তি বাড়ে। গর্ভাবস্থায় যেসব মায়েরা বদহজমে ভোগেন, তাদের জন্য উপকারী।
সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো কি কি
সকালে কলা খাওয়া অনেক উপকারী হতে পারে কারণ কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। নিচে সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা গুলো আলোচনা করা হলো
শক্তির উৎসঃ কলা প্রাকৃতিক চিনি ও ফাইবারে সমৃদ্ধ। সকালে খেলে এটি শরীরে দ্রুত শক্তি জোগায় এবং সারাদিন চনমনে থাকতে সাহায্য করে।
হজমে সাহায্য করেঃ কলা সহজে হজম হয় এবং এতে বিদ্যমান খাদ্য আঁশ (ডায়েটারি ফাইবার) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
মানসিক সতেজ রাখতে সাহায্য করেঃ কলা খেলে মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিন নিঃসরণ বাড়ে, যা সকালে মন ভালো রাখে এবং স্ট্রেস কমায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ সকালে কলা খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে, অকারণে বেশি খাওয়া কমায়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরঃ কলা পটাশিয়ামে সমৃদ্ধ, যা শরীরের সোডিয়ামের ভারসাম্য রক্ষা করে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে।
হাড় ও পেশী মজবুত করেঃ কলা ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে এবং পটাশিয়াম পেশীর ক্র্যাম্প কমায়। সকালে খেলে শরীর সতেজ থাকে।
ত্বক ও সৌন্দর্য জন্য উপকারীঃ কলা ভিটামিন এ, সি, ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা সকালে খেলে ত্বক উজ্জ্বল হয় ও বার্ধক্য বিলম্বিত করে।
হার্টের জন্য ভালোঃ পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ কলা সকালে খেলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
রক্তে শর্কর ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করেঃ কলা ফাইবার ও রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ সমৃদ্ধ, যা রক্তে শর্করা ধীরে ধীরে শোষিত হতে সাহায্য করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য পরিমিত কলা খাওয়া উপকারী হতে পারে।
রাতে কলা খাওয়ার উপকারিতা
ভালো ঘুম আনেঃ কলা ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা শরীরে সেরোটনিন ও মেলাটোনিন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। এগুলো মানসিক প্রশান্তি দেয় ও ঘুমকে গভীর করে তোলে। তাই যারা অনিদ্রায় ভোগেন, তাদের জন্য রাতে কলা খাওয়া উপকারী।
হজম শক্তি বাড়ায়ঃ রাতে খাওয়ার পর অনেকের বদহজম বা অস্বস্তি হয়। কলায় থাকা ফাইবার খাবার হজমে সহায়তা করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং পেট পরিষ্কার রাখে।
পেশী ও স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করেঃ কলা প্রচুর পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করে। এগুলো শরীরের পেশীকে শিথিল করে, স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে এবং রাতের সময় পেশীতে টান বা ক্র্যাম্প পড়া কমাতে সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ কলা খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা অনুভূতি হয়, কারণ এতে ফাইবার বেশি। ফলে রাতে অযথা অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য রাতে কলা হালকা খাবার হিসেবে ভালো।
রক্তে চাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ কলা খেলে শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম এর প্রভাব কমে যায়। রাতে কলা খেলে শরীর আরাম পায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়।
মেজাজ ভালো রাখেঃ কলা খেলে শরীরে সেরোটনিন তৈরি হয়, যা মানসিক চাপ, ক্লান্তি ও দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে। রাতে কলা খাওয়া মানসিক প্রশান্তি এনে ঘুমকে আরও শান্ত করে তোলে।
শক্তির উৎসঃ কলা প্রাকৃতিক চিনি ও ফাইবারে সমৃদ্ধ। এগুলো ধীরে ধীরে শক্তি জোগায়, ফলে রাতে শরীর দুর্বল লাগে না এবং সকালে সতেজভাবে ঘুম ভাঙে।
দুধ কলা একসাথে খাওয়ার উপকারিতা
দুধ ও কলা একসাথে খাওয়া একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার হিসেবে পরিচিত। দুধে যেমন থাকে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন; তেমনি কলায় আছে প্রাকৃতিক শর্করা, ফাইবার, ভিটামিন বি৬ ও পটাশিয়াম। এ কারণে দুধ-কলার মিশ্রণ শরীরের জন্য একটি কমপ্লিট এনার্জি মতো কাজ করে।
দ্রুত শক্তি জাগায়ঃ কলার প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ) ও দুধের প্রোটিন শরীরকে তাৎক্ষণিক এনার্জি দেয়। বিশেষ করে খেলাধুলা বা কঠোর পরিশ্রমের পর দুধ-কলার শেক খুবই উপকারী।
ওজন বাড়াতে সাহায্য করেঃ দুধের ফ্যাট ও প্রোটিন আর কলার প্রাকৃতিক ক্যালরি একসাথে শরীরকে অতিরিক্ত পুষ্টি দেয়। যারা খুব শুকনো বা ওজন বাড়াতে চান, তাদের জন্য দুধ-কলার শেক প্রতিদিন খাওয়া কার্যকর।
পেশি গঠন ও শক্তি বৃদ্ধি করেঃ দুধে থাকা হাই কোয়ালিটি প্রোটিন আর কলার কার্বোহাইড্রেট পেশি মেরামত ও গঠনে সাহায্য করে। জিম করা বা শারীরিক পরিশ্রমী মানুষের জন্য এটি একটি আদর্শ পানীয়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ কলার পটাশিয়াম ও দুধের ক্যালসিয়াম একসাথে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তাদের জন্য উপকারী।
হজমের সহায়তা করেঃ কলায় থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। দুধের প্রোবায়োটিক উপাদান অন্ত্রের জন্য উপকারী।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ দুধের ভিটামিন এ, ডি ও প্রোটিন শরীরকে শক্তিশালী করে। কলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি-র্যাডিক্যাল দূর করে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য উপকারীঃ দুধ-কলার সংমিশ্রণ ভ্রূণের হাড় ও মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক। গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি দূর করতে ও অতিরিক্ত এনার্জি যোগাতে পারে।
ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়ায়ঃ দুধে থাকা প্রোটিন ও ভিটামিন কলার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সাথে মিলে ত্বককে উজ্জ্বল রাখে। চুলে প্রোটিন ও খনিজ সরবরাহ করে চুল মজবুত করে।
পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা
পাকা কলা আমাদের চারপাশে সহজলভ্য একটি ফল, যা শুধু সুস্বাদুই নয় বরং অসাধারণ পুষ্টিগুণে ভরপুর। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পাকা কলা অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের নানা উপকার হয়। নিচে পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা
শক্তি জোগায়ঃ পাকা কলায় প্রাকৃতিক চিনি (গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ) প্রচুর থাকে যা দ্রুত শক্তি জোগায়। খেলাধুলার আগে বা পরে এটি খেলে শরীর সতেজ থাকে।
হজমে সহায়কঃ এতে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ পাকা কলায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে যা শরীরের সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
হার্টের জন্য ভালোঃ পাকা কলায় ফাইবার, ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ পাকা কলার ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও ডোপামিন উৎপাদনে সহায়তা করে। ফলে মানসিক চাপ কমে, মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে।
রক্তশূন্যতার প্রতিরোধ করেঃ কোলায় আয়রন ও ফলিক এসিড থাকে যা হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সহায়ক।
হাড় মজবুত করেঃ পাকা কলার পটাশিয়াম ক্যালসিয়ামের ক্ষয় কমায়, ফলে হাড় মজবুত থাকে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে।
কিডনির জন্য উপকারীঃ নিয়মিত পরিমাণমতো পাকা কলা খেলে কিডনির কার্যকারিতা ভালো থাকে এবং কিডনির রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ যদিও এতে ক্যালরি কিছুটা বেশি থাকে, তবে ফাইবার থাকার কারণে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া কম হয়, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সর্দি-কাশি বা সংক্রমণ থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।
ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়ায়ঃ পাকা কলার ভিটামিন সি, বি৬ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল করে, বয়সের ছাপ কমায় এবং চুল মজবুত রাখে।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো প্রভাব ফেলেঃ পাকা কলায় থাকা ট্রিপটোফ্যান শরীরে সেরোটোনিন তৈরি করে, যা মন ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং হতাশা বা উদ্বেগ কমায়।
কলা খাওয়ার অপকারিতা
কলা একটি জনপ্রিয় ফল এবং এর উপকারিতা অনেক হলেও অতিরিক্ত খাওয়া বা কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ওজন বৃদ্ধি করার সম্ভাবনাঃ কলা প্রাকৃতিক চিনির ও ক্যালোরির ভালো উৎস। যারা নিয়মিত অনেকগুলো কলা খান তাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে গিয়ে ওজন বাড়তে পারে। বিশেষ করে যারা শরীরচর্চা করেন না তাদের জন্য এটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকিঃ পাকা কলায় প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকে। ডায়াবেটিস রোগীরা বেশি কলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। তাই তাদের সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্যঃ কাঁচা কলায় স্টার্চ ও ট্যানিন বেশি থাকে, যা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। বেশি কাঁচা কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
মাথা ব্যথাঃ কলা বিশেষ করে অতিরিক্ত পাকা কলায় নামক উপাদান থাকে যা মাইগ্রেনের রোগীদের মাথাব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে।
রক্তে পটাশিয়াম বেড়ে যাওয়াঃ কলা পটাশিয়ামের ভালো উৎস হলেও একসাথে অনেকগুলো কলা খেলে শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়ে রক্তে পটাশিয়াম বেড়ে যাওয়া হতে পারে। এর ফলে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাংসপেশিতে দুর্বলতা, এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এলার্জির ঝুঁকিঃ অনেকের শরীরে কলা খেলে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি, গলা চুলকানো, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। বিশেষ করে যারা তে ভোগেন, তাদের কলার অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
অতিরিক্ত ঘুমভাবঃ কলা ট্রিপটোফ্যান সমৃদ্ধ, যা শরীরে সেরোটোনিন তৈরি করে এবং ঘুমভাব বাড়ায়। অতিরিক্ত কলা খেলে দিনে অতিরিক্ত অলসতা ও ঘুমভাব আসতে পারে।
দাঁতের ক্ষতিঃ কলা মিষ্টি ও আঠালো প্রকৃতির হওয়ায় দাঁতের ফাঁকে লেগে থাকতে পারে। নিয়মিত বেশি কলা খেয়ে যদি সঠিকভাবে দাঁত পরিষ্কার না করা হয় তবে দাঁতে ক্ষয় ও ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পেট ফাঁপা ও গ্যাসের সমস্যাঃ কলা খাওয়ার ফলে অনেকের পেটে গ্যাস, ফাঁপা ভাব ও অস্বস্তি হতে পারে, বিশেষ করে যারা হজমের সমস্যা এ ভুগছেন।
কলাতে থাকা পুষ্টি উপাদান
কার্বোহাইড্রেটঃ কলা হলো প্রাকৃতিক শক্তির অন্যতম উৎস। এতে প্রায় ২২–২৭% কার্বোহাইড্রেট থাকে। কলার মধ্যে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ থাকে, যা শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।
প্রোটিনঃ যদিও প্রোটিনের পরিমাণ কম (প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১–১.৫ গ্রাম), তবুও শরীরের কোষ গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণে সহায়ক।
চর্বিঃ কলায় চর্বি খুব কম (প্রায় ০.৩ গ্রাম/১০০ গ্রাম)। এজন্য এটি হালকা ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযোগী ফল।
ডায়েটারি ফাইবারঃ কলায় ফাইবার প্রচুর (২–৩ গ্রাম/১০০ গ্রাম)। এটি হজমে সহায়ক, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
পানিঃ প্রতি ১০০ গ্রাম কলায় প্রায় ৭৪–৭৫% পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানঃ কলায় ডোপামিন ও ক্যাটেচিন নামক প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো শরীরে ফ্রি-র্যাডিকেল প্রতিরোধ করে, যা বার্ধক্য ধীর করে ও বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
ভিটামিন সমুহঃ ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টি ভালো রাখে, ত্বক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। ভিটামিন বি স্নায়ু, হজম ও শক্তি উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ক্ষত দ্রুত সারতে সাহায্য করে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। ভিটামিন বি৬ স্নায়ুতন্ত্র ও রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ।
খনিজ উপাদানঃ পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হৃদযন্ত্র ও পেশি শক্তিশালী রাখে।ম্যাগনেসিয়াম হাড় ও পেশির জন্য উপকারী, মানসিক চাপ কমায়। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত মজবুত করে। আইরন রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে, অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। ফসফরাস হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। জিংক ও কপার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা
নিয়মিত কলা খাওয়া শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কলা একটি সহজলভ্য, সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল যেখানে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার ও প্রাকৃতিক শক্তি। নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো
শক্তি যোগায়ঃ কলা প্রাকৃতিকভাবে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজের মতো শর্করা ধারণ করে, যা শরীরে দ্রুত শক্তি যোগায়। এজন্য ক্রীড়াবিদ বা যারা বেশি শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের জন্য কলা খুবই কার্যকর।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় মিষ্টি কুমড়া খাওয়ার উপকারিতা
হজমের সাথে বৃদ্ধি করেঃ কলা হজমে সহায়ক ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, অন্ত্র পরিষ্কার রাখে এবং হজমের গতি স্বাভাবিক করে।
সুস্থ রাখে হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখেঃ কলা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। একই সঙ্গে সোডিয়ামের মাত্রা সঠিক রাখতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমায়ঃ কলা ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড ধারণ করে, যা শরীরে সেরোটোনিন উৎপাদনে সহায়তা করে। এটি মস্তিষ্ককে শান্ত রাখে, মানসিক চাপ কমায় ও ভালো মুড তৈরি করে।
রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করেঃ কলা আয়রন ও ফলিক অ্যাসিডের ভালো উৎস। এটি নিয়মিত খেলে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি পায়, রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ কলা ফাইবারসমৃদ্ধ হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে। ফলে অতিরিক্ত খাবারের ইচ্ছা কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়।
হাড় ও দাঁত মজবুত রাখেঃ কলা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়ামের সমন্বয়ে হাড়কে মজবুত করে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ কলা ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং নানা ধরনের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
কিডনি সুস্থ রাখেঃ নিয়মিত পরিমাণমতো কলা খেলে কিডনির কার্যক্ষমতা ভালো থাকে। পটাশিয়াম কিডনিতে ক্ষতিকর খনিজ জমতে দেয় না।
গর্ভবতীদের জন্য উপকারীঃ কলা গর্ভবতী নারীর বমিভাব, দুর্বলতা ও অম্লভাব কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ভ্রূণের বৃদ্ধিতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
শরীর ঠান্ডা রাখেঃ কলা একটি প্রাকৃতিক কুলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং বিশেষ করে গরমকালে শরীর সতেজ রাখে।
ত্বক ও চুলের যত্নেঃ কলার ভিটামিন ও খনিজ ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং চুল মজবুত রাখতে সাহায্য করে।
শেষকথাঃ সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
পরিশেষে বলা যায় যে, সাগর কলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সাগর কলা পুষ্টিকর ও সহজলভ্য ফল, যা সঠিক পরিমাণে খেলে শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শক্তি, ভিটামিন, খনিজ ও আঁশ সরবরাহ করে শরীরকে সুস্থ রাখে। সাগর কলা শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং এতে ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবারের মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরের জন্য উপকারী। বিশেষ করে শক্তি জোগানো, হজমে সহায়তা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
আজকের এই আর্টিকেলে আপনারা জানতে পারলেন যে সাগরকলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। অন্যান্য ফল মূল্যের তুলনায় সাগরকলা কম দামে পাওয়া যায়। আর এই সাগরকলা আমাদের নানা রকম উপকার করে থাকে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হৃদযন্ত্র ও পেশি শক্তিশালী রাখে।ম্যাগনেসিয়াম হাড় ও পেশির জন্য উপকারী, মানসিক চাপ কমায়। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত মজবুত করে। আইরন রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করে, অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে। ফসফরাস হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। জিংক ও কপার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
সাবিনা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url