গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে কি হয় উপকারিতা ও সতর্কতা

গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে কি হয় আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের জন্য চালতারাচার অনেক উপকার করে থাকে। গর্ভাবস্থায় অনেক সময় গর্ভবতীদের মুখের রুচি কমে যায়। 

গর্ভাবস্থায়-চালতা-খেলে-কি-হয়

চালতা টক হওয়ায় এটি মুখে রুচি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে পারে। চালতায় থাকে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও কিছু পরিমাণে মিনারেল যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে কি হয়।

সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে কি হয় 

গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে কি হয়, গর্ভাবস্থা একটি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে একজন নারীর প্রতিটি খাবার, প্রতিটি অভ্যাস তার শরীর এবং অনাগত শিশুর উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এ সময় নারীরা সচেতনভাবে বেছে নিতে চান কোন খাবার খাওয়া নিরাপদ এবং কোনটা এড়িয়ে চলা উচিত। গ্রামবাংলার অনেক পরিচিত দেশি ফল, যেমন চালতা, এই সময়ে মন আকর্ষণ করে তার স্বাদ ও টক-মিষ্টি বৈশিষ্ট্যের জন্য। চালতা শুধু স্বাদেই অনন্য নয়, এতে রয়েছে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান যা শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। 

গর্ভে থাকা শিশুর মস্তিষ্ক উন্নয়নের সাহায্য করে এবং গর্ভবতী মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে আর খাদ্য হজমে সহযোগিতা করে থাকে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, সাহায্য করে এবং ভিটামিন এ ও সি ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে। গর্ভবতীর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে তবে গর্ভাবস্থায় শরীরের চাহিদা ও প্রতিক্রিয়া ভিন্ন রকম হয়। তাই এই সময়ে চালতা খাওয়া কতটা নিরাপদ বা উপকারী, কিংবা এতে কোনো ঝুঁকি আছে কি না এই প্রশ্নগুলো জানা জরুরি।

গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার নিয়ম 

চালতা একটি টকজাতীয় ফল। এটি ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। এটি সাধারণত টক স্বাদের আচার, ভর্তা কিংবা তরকারিতে ব্যবহার করা হয়। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে (২-৩ চামচ চালতার টক বা ভর্তা) খাওয়া যেতে পারে। অতিরিক্ত খেলে গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা হজমে সমস্যা হতে পারে। দুপুরে ভাতের সাথে সামান্য চালতার ভর্তা বা টক খাওয়া হজমে সহায়ক হতে পারে। রাতে খেলে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সম্ভাবনা বাড়ে। কাঁচা বা আধাম পাকা চালতা এড়িয়ে চলুন। 

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় লটকন খাওয়া যাবে কি

পাকা চালতা হজমে সহজ এবং টকত্ব নিয়ন্ত্রিত থাকে। চালতার খোসা শক্ত এবং মাঝে মাঝে ময়লা থাকতে পারে, তাই ভালোভাবে পরিষ্কার করা জরুরি। চালতা দিয়ে রান্না করা খাবারে লবণ বা ঝাল বেশি হলে তা গর্ভাবস্থায় ক্ষতি করতে পারে। চালতার টক স্বভাব গ্যাস্ট্রিক বাড়াতে পারে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে, সাহায্য করে এবং ভিটামিন এ এবং সি ঘাটতি পূরণ করতে সহায়তা করে। গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়া যাবে, তবে তা পরিমিত, সতর্ক এবং পরিষ্কারভাবে রান্না করে খাওয়াই নিরাপদ। 

চালতার বৈশিষ্ট্য 

চালতা একটি জনপ্রিয় ফল যা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানে পাওয়া যায়। চালতার বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায় এর গঠন, স্বাদ, পুষ্টিগুণ, ঔষধি গুণ, ও ব্যবহারিক দিক থেকে। চালতার গাছ চিরসবুজ। এই গাছ সাধারণত ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত হয়। পাতাগুলো দেখতে বড়, ডিম্বাকৃতি, দাঁতালো কিনারাযুক্ত, পুরু এবং চকচকে। আর এর ফুলগুলো বড়, সাদা রঙের, সুগন্ধযুক্ত; ব্যাস প্রায় ১৫-২০ সেন্টিমিটার। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে হলদেটে-সবুজ বা বাদামি আভা যুক্ত হয়। পাকা চালতা জুস বা মিষ্টি পদে ব্যবহৃত হয়। চালতা খেলে হজমশক্তি

বাড়ায় এবং বদহজম দূর করে, গলা ব্যথা ও কাশি উপশমে সহায়ক, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকারী, অম্লতা ও গ্যাসের সমস্যা কমাতে সহায়ক এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ভালো জন্মায়। বৃষ্টিপ্রধান অঞ্চলে ফলন ভালো হয়। শক্ত কাঠ হওয়ায় গাছটি বাতাস ও ঝড়ে সহজে ভাঙে না। মাটির ধরন হিসেবে দো-আঁশ ও বেলে-দো-আঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। গ্রামীণ এলাকায় চালতা আচার, মোরব্বা, জুস ইত্যাদির জন্য জনপ্রিয়। আচার শিল্পে চালতা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। অনেক অঞ্চলে চালতার কাঠ হালকা আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা 

আপনারা অনেকে জানতে চেয়েছেন এবং ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করেছেন যে গর্ভাবস্থায় চালটা খেলে গর্ভবতীদের কি ধরনের উপকার হতে পারে। আজকের এই আর্টিকেলে জানতে পারবেন গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে গর্ভবতীদের যা উপকারিতা সম্পর্কে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক গর্ভাবস্থায় চালতা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কমে যায় গর্ভাবস্থায় গর্ভবতীদের। থাইরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং শরীর সুস্থ রাখতে গর্ভবতী মায়েদের জন্য চালতা খাওয়া উচিত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায় চালতা খেলে।

হজমের সমস্যা দূর করেঃ গর্ভবতী মায়েদের জন্য চালতা অনেকটা উপকারী কারণ হজমের সমস্যা দেখে দিলে এবং গর্ভে থাকা সন্তান এর স্বাস্থ্য দুর্বলতা দেখা দিলে। চালতা খেলে হজমের সমস্যা দূর হবে এবং গর্ভে থাকা শিশুর উন্নত ঘটবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করেঃ প্রতিটি মেয়ের সাধারণত গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য  সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পাইলসের রূপ নেই। তাই এই সময় গর্ভবতী মায়েদের চালতা খাওয়া উচিত। চালতা নিয়মিত খেলে হজম করতে সাহায্য করে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ গর্ভবতী মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চালতা। তাই গর্ভবতী সময়ে নিয়মিত চালটা খাওয়া উচিত।

শিশুর হাড় মজবুত করতে সাহায্য করেঃ চালতাই রয়েছে ক্যালসিয়াম গর্ভবতী না খেলে শিশু হাড় মজবুত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

গর্ভকালীন পেট ব্যথা দূর করতেঃ গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের পেট ব্যথা সমস্যা হয় তাই এই ব্যথা দূর করতে চাল তার জুড়ির শেষ নেই। তাই গর্ভবতী মায়েরা চালতা খেলে পেট ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।

শিশুর হার্ট ভালো রাখতেঃ শিশুর হার্ট ভালো রাখতে চালতা অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মা যদি চালতা খায় তাহলে শিশুর হার্ট ভালো থাকে।

গর্ভে থাকা শিশুর পুষ্টি যোগায়ঃ চালতা ফল একটি অধিক পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ। এটি গর্ভাবস্থায় খেলে গর্ভে থাকা শিশুর পুষ্টি যোগাড় করতে সাহায্য করে। তাই গর্ভে থাকা অবস্থায় গর্ভবতী মা যদি নিয়মিত ভাবে চালতা ফল খায় পেতে মা এবং শিশুর উপকার হবে।

রুচি ও স্বাদ বাড়ানোঃ টক ও হালকা মিষ্টি স্বাদের কারণে অনেক সময় গর্ভাবস্থার বমি ভাব ও ক্ষুধামান্দ্য কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে প্রথম ত্রৈমাসিকে অনেক নারী চালতার টক স্বাদে স্বস্তি পান।

আন্টিঅক্সিডেন্ট সুরক্ষাঃ চালতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগ মায়ের শরীরে ফ্রি-র‍্যাডিক্যালের ক্ষতি কমায়। এটি মায়ের ও ভ্রূণের কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।

হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারীঃ এতে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে যা মায়ের হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও দাঁতের বিকাশেও সহায়ক।

চালতার পুষ্টি উপাদান 

  • শক্তিঃ ৫০–৬০ ক্যালোরি – দৈনন্দিন শক্তি সরবরাহ করে।
  • কার্বোহাইড্রেটঃ ১২–১৫ গ্রাম – শরীরের জ্বালানি, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
  • প্রোটিনঃ ০.৫–১ গ্রাম – কোষের বৃদ্ধি ও মেরামত করে।
  • ফ্যাটঃ ০.২–০.৫ গ্রাম – হরমোন উৎপাদন ও কোষের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
  • আহারযোগ্য আশঃ ৩–৫ গ্রাম – হজম শক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।
  • ভিটামিন এঃ ১০০–১৫০ আই ইউ – চোখের স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সহায়ক।
  • ক্যালসিয়ামঃ ২০–৩০ মি.গ্রা. – হাড় ও দাঁতের দৃঢ়তা বজায় রাখে।
  • আইরনঃ ০.৫–১ মি.গ্রা. – রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠন, অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে।
  • পটাশিয়ামঃ ১৫০–২০০ মি.গ্রা. – রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
  • ম্যাগনেসিয়ামঃ ১০–১৫ মি.গ্রা. – স্নায়ু ও পেশীর কার্যকারিতা বাড়ায়।
  • ফসফরাসঃ ১৫–২০ মি.গ্রা. – হাড়, দাঁত ও কোষের গঠন মজবুত করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

চালতা খাওয়ার নিয়ম 

চালতা একটি টকজাতীয় ফল, যা স্বাদে ঝাঁঝালো ও শীতল প্রকৃতির। এটি কাঁচা বা রান্না উভয়ভাবেই খাওয়া যায় এবং ওষুধি গুণও রয়েছে। কাঁচা অবস্থায় ভালোভাবে ধুয়ে লবণ বা চাটনি মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সালাদ বা আচারেও ব্যবহার হয়। রান্না করে মাছ বা ডাল রান্নায় টক স্বাদ আনার জন্য ব্যবহার করা হয়। শুকিয়ে গুঁড়ো করে মসলা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। রস আকারে চালতার রস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যায়, তবে ২–৩ চামচের বেশি নয়। বেশি পরিমাণে রস খেলে পেটে জ্বালা বা ডায়রিয়া হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ লাল শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা

খাবার সময় খালি পেটে নয় চালতা অত্যন্ত টক হওয়ায় খালি পেটে খেলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক বেড়ে যেতে পারে। খাওয়ার পর বা নাস্তার সঙ্গে দুপুর বা বিকেলে খাবারের সঙ্গে বা পরপর খাওয়া ভালো। গরমের সময় গ্রীষ্মকালে চালতার শীতল গুণ শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়ক। তবে পরিমাণ মতো খেতে হবে যেমন ধরেন প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি কাঁচা চালতা বা ২০ থেকে ৩০ গ্রাম যথেষ্ট বেশি খেলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হতে পারে এবং পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হতে পারে।

চালতা খাওয়ার অপকারিতা 

অতিরিক্ত অম্লতার কারণে গ্যাস্ট্রিক সমস্যাঃ চালতায় অম্লের পরিমাণ বেশি থাকে। অতিরিক্ত খেলে পেটে জ্বালাপোড়া, অম্বল ও এসিডিটি হতে পারে।

দাঁতের এনামেলের ক্ষতিঃ টক ও অ্যাসিডিক হওয়ায় দাঁতের এনামেল ক্ষয় করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে দাঁত দুর্বল বা সংবেদনশীল হতে পারে।

ডায়রিয়া ও হজমে সমস্যাঃ অতিরিক্ত চালতা খেলে পেটে ব্যথা, পাতলা পায়খানা বা পেট খারাপ হতে পারে।

লো ব্লাড প্রেসারের ঝুঁকিঃ চালতায় কিছু উপাদান রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যাদের প্রেসার স্বাভাবিকের নিচে থাকে, তাদের জন্য এটি বিপদজনক হতে পারে।

গর্ভবতী মায়েদের জন্য সমস্যাঃ অতিরিক্ত টক খাওয়ার ফলে এসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিক বাড়তে পারে।জরায়ুর সংকোচনজনিত সমস্যার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।।

এলার্জির ঝুঁকিঃ কারও কারও ক্ষেত্রে চালতা খেলে চুলকানি, ফুসকুড়ি বা ত্বকে এলার্জি দেখা দিতে পারে।

ঔষধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারেঃ অ্যাসিডিক ফল কিছু ওষুধের শোষণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে।বিশেষ করে হজমজনিত ওষুধ বা ব্লাড প্রেসারের ওষুধের সঙ্গে খেলে সমস্যা হতে পারে।

শিশুদের জন্য ক্ষতিকারকঃ অতিরিক্ত খেলে শিশুদের দাঁত ও পেটের সমস্যা বাড়তে পারে।

চালতার উৎপত্তি ও আকার 

চালতা গাছ মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার ও থাইল্যান্ড অঞ্চল থেকেই এর বিস্তার ঘটেছে। আমাদের দেশে চালতা গাছ গ্রামাঞ্চলের বাগান, রাস্তার ধারে ও পতিত জমিতে স্বাভাবিকভাবে জন্মে। বিশেষ করে সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসায় চালতার ফল, পাতা ও বাকল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। 

চালতার গাছ চিরসবুজ। এই গাছ সাধারণত ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত হয়। পাতাগুলো দেখতে বড়, ডিম্বাকৃতি, দাঁতালো কিনারাযুক্ত, পুরু এবং চকচকে। আর এর ফুলগুলো বড়, সাদা রঙের, সুগন্ধযুক্ত; ব্যাস প্রায় ১৫-২০ সেন্টিমিটার। কাঁচা অবস্থায় সবুজ, পাকলে হলদেটে-সবুজ বা বাদামি আভা যুক্ত হয়। আকারে বড়, গোলাকার, আঁশযুক্ত এবং শক্ত খোসাযুক্ত। চালতার স্বাদ টক-মিষ্টি। এর গঠন হচ্ছে ভিতরে সাদা বা হালকা হলুদ রঙের শাঁস থাকে, যা আঁশযুক্ত।

চালতা পাতার উপকারিতা

জ্বর কমাতে সাহায্য করেঃ চালতা পাতার রস শরীরে জ্বর কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে সর্দি-কাশিজনিত জ্বরের ক্ষেত্রে উপকারী।

ডায়রিয়া ও আমাশয় কমাতে সাহায্য করেঃ পাতার নির্যাস অন্ত্রের জীবাণু দমন করে এবং পাতলা পায়খানা, আমাশয় ও পেটের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

মুখ ও দাঁতের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করেঃ চালতা পাতার ক্বাথ দিয়ে কুলি করলে দাঁতের ব্যথা, মাড়ি ফোলা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়।

ক্ষত ও ঘা শুকাতে সাহায্য করেঃ পাতা বেটে ক্ষত বা ঘায়ে লাগালে দ্রুত শুকাতে ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

প্রদাহ ও ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করেঃ চালতা পাতায় প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে যা শরীরের ফোলা বা ব্যথা কমাতে ব্যবহৃত হয়।

রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করেঃ নিয়মিত চালতা পাতার নির্যাস সেবনে রক্তের বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে শরীর পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

চর্মরোগ নিরাময়ে উপকারীঃ চুলকানি, ফোড়া, একজিমা ও অন্যান্য চর্মরোগে চালতা পাতার রস বা বাটা অংশ প্রয়োগ করলে আরাম মেলে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর উৎসঃ তে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং বার্ধক্য বিলম্বিত করে।

কাশি ও গলা ব্যথা কমাতে সাহায্য করেঃ পাতার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কাশি ও গলার ব্যথা কমে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করেঃ গবেষণায় দেখা গেছে চালতা পাতার নির্যাস রক্তে শর্করার মাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

চালতার ভেষজ গুনাগুন 

চালতা একটি ভেষজ গুণসম্পন্ন ফল। এটি শুধু খাবার হিসেবে নয়, প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদিক ও লোকজ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ  চালতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।

ত্বকের সমস্যা নিরাময়েঃ ফোড়া, একজিমা ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যায় চালতা পাতার রস ব্যবহার করা হয়।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ চালতা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করেঃ এটি ক্ষুধামন্দা সমস্যায় উপকারী।

অম্লতা ও গ্যাস কমায়ঃ পেটের অস্বস্তি, গ্যাস ও অম্লতা দূর করতে চালতা কার্যকর।

ডায়রিয়া ও আমাশয় কমাতে সাহায্য করেঃ পাতার নির্যাস অন্ত্রের জীবাণু দমন করে এবং পাতলা পায়খানা, আমাশয় ও পেটের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

লিভারের জন্য ভালোঃ চালতা লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

জ্বর নিরাময়ের সহায়কঃ লোকজ চিকিৎসায় জ্বর কমাতে চালতা ব্যবহার করা হয়।

শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি রোগে সহায়কঃ এর ভেষজ গুণ শ্বাসনালীর সমস্যা কিছুটা লাঘব করে।

কফ ও সর্দি কমাইঃ কফ নিরাময়ে চালতা কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

রক্তশূন্যতা দূর করেঃ চালতায় ভিটামিন সি থাকায় এটি আয়রন শোষণে সাহায্য করে।

চালতা কি ধরনের ফল

চালতা একটি ঔষধি গুণসম্পন্ন এবং স্বাদে টক ফল। এটি দক্ষিণ এশিয়ার বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। বাংলায় এটি "চালতা" নামে পরিচিত। ফলটি সাধারণত সবুজ রঙের হয় এবং পাকলে হালকা হলদে আভা ধারণ করে। চালতার বাইরের আবরণ শক্ত হলেও ভেতরের অংশ নরম, টক এবং আঁশযুক্ত। চালতা গাছ একটি বড় আকারের চিরসবুজ বৃক্ষ। এর উচ্চতা প্রায় ১০-১৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। গাছের পাতা বড় ও শক্ত ধরনের হয় এবং শীতে পাতা ঝরে যায় না। ফলটি আকারে 

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা

সাধারণত আপেলের মতো গোলাকার হলেও অনেকটা চ্যাপ্টা। বাইরের অংশ শক্ত খোলসের মতো এবং ভেতরে থাকে নরম রসালো অংশ। এই টক স্বাদের কারণে এটি রান্না, আচার, চাটনি ও ভেষজ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। চালতা একটি বহু বীজযুক্ত টক ফল। ফলের ভেতরে অসংখ্য বীজ থাকে এবং প্রতিটি বীজের চারপাশে নরম শাঁসের মতো অংশ দেখা যায়। চালতার শাঁসে প্রচুর আঁশ থাকে যা হজমে সাহায্য করে। টক স্বাদের জন্য এটি ফল হিসেবে সরাসরি খাওয়ার চেয়ে রান্না ও ভেষজ কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়।

চালতা শুধু খাদ্য হিসেবেই নয়, ভেষজ চিকিৎসায়ও সমান কার্যকর। এটি হজম শক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ডায়রিয়া ও আমাশয়ে উপকারী। এছাড়া শরীর ঠান্ডা রাখতেও চালতা কার্যকর ভূমিকা পালন করে। গ্রামীণ সমাজে চালতা আচার ও তরকারি রান্নায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

চালতার আচার রেসিপি 

চালতার আচার খুবই জনপ্রিয় একটি টক-মিষ্টি ঝাল স্বাদের আচার। এটি ভাত, খিচুড়ি কিংবা স্ন্যাকসের সাথে খেতে দারুণ লাগে। নিচে চালতার আচার রেসিপি ধাপে ধাপে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো

  • চালতা -১ কেজি 
  • লবণ - পরিমাণমতো 
  • হলুদ গুঁড়া - ১ টেবিল চামচ 
  • মরিচ গুঁড়া - ৩ টেবিল চামচ 
  • শুকনা মরিচ ভাজা গুঁড়া - ১ টেবিল চামচ 
  • সরিষা বাটা - ৩ টেবিল চামচ 
  • সরিষার তেল - ১ কাপ 
  • রসুন কোয়া - ১৫–২০টি (কুচি বা আস্ত রাখা যায়) 
  • আদা বাটা - ১ টেবিল চামচ 
  • জিরা গুঁড়া - ১ চা চামচ 
  • মেথি ভাজা গুঁড়া - ১ চা চামচ 
  • চিনি - ১ কাপ (ইচ্ছেমতো, মিষ্টি স্বাদ চাইলে বেশি দেওয়া যায়) 
  • ভিনেগার - আধা কাপ

প্রস্তুত প্রণালীঃ 

প্রথমে চালতা ভালোভাবে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কাটতে হবে। লবণ ও সামান্য হলুদ মেখে রোদে প্রায় ১–২ দিন শুকাতে হবে। এতে অতিরিক্ত পানি শুকিয়ে যাবে এবং চালতা নরম হবে। তারপরে সরিষার তেল কড়াইয়ে গরম করতে হবে। প্রথমে রসুন ও আদা হালকা বাদামি রং হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিতে হবে। এরপর জিরা গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, শুকনা মরিচ গুঁড়া, সরিষা বাটা ও হলুদ গুঁড়া দিয়ে ভালোভাবে কষাতে হবে। মশলা কষানো হলে সামান্য পানি দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপরে শুকানো চালতার টুকরো মশলার মধ্যে দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে। 

এবার চিনি দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে এবং মাঝারি আঁচে নাড়াচাড়া করতে হবে যতক্ষণ না চিনি গলে সিরা তৈরি হয়। সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন শুকানো চালতার টুকরো মশলার মধ্যে দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে। এবার চিনি দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে এবং মাঝারি আঁচে নাড়াচাড়া করতে হবে যতক্ষণ না চিনি গলে সিরা তৈরি হয়। এছাড়াও কিছু টিপস রয়েছে আচারের জন্য আচার বানানোর সময় সব যন্ত্রপাতি শুকনা থাকতে হবে, পানি লাগলে আচার নষ্ট হয়ে যাবে। রোদে শুকানো চালতা ব্যবহার করলে আচারের স্বাদ আরও উন্নত হয়। চিনি পরিমাণ নিজের পছন্দমতো বাড়ানো বা কমানো যায়। চাইলে আচারে কাঁচা মরিচ ফালি করে দিতে পারেন।

শেষকথাঃ গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে কি হয়

পরিশেষে বলা যায় যে, গর্ভাবস্থায় চালতা খেলে কি হয় চালতা একটি জনপ্রিয় ফল যা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানে পাওয়া যায়। চালতার বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায় এর গঠন, স্বাদ, পুষ্টিগুণ, ঔষধি গুণ, ও ব্যবহারিক দিক থেকে। চালতা একটি টকজাতীয় ফল, যা স্বাদে ঝাঁঝালো ও শীতল প্রকৃতির। 

এটি কাঁচা বা রান্না উভয়ভাবেই খাওয়া যায় এবং ওষুধি গুণও রয়েছে। কাঁচা অবস্থায় ভালোভাবে ধুয়ে লবণ বা চাটনি মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সালাদ বা আচারেও ব্যবহার হয়। রান্না করে মাছ বা ডাল রান্নায় টক স্বাদ আনার জন্য ব্যবহার করা হয়। শুকিয়ে গুঁড়ো করে মসলা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। রস আকারে চালতার রস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যায়, তবে ২–৩ চামচের বেশি নয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাবিনা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url