মুলতানি মাটি চেনার উপায়, রাতারাতি ফর্সা হওয়ার উপায়
মুলতানি মাটি চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে চান। মুলতানি মাটি কিভাবে
ব্যবহার করা হয়? জানতে হলে শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে
পড়ুন। মুলতানি মাটি আমাদের অনেক উপকার করে থাকে।
কারণ আসল মুলতানি মাটি চেনার উপায় সম্পর্কে আজকে আর্টিকেলে আলোচনা
করব। মুলতানি মাটি মুখে ব্যবহারের নিয়ম, মুলতানি মাটির দাম, এছাড়াও
জানবো মুলতানি মাটির অপকারিতা সম্পর্কে।
সূচিপত্রঃ
- মুলতানি মাটি চেনার উপায়
- মুলতানি মাটির ইতিকথা
- মুলতানি মাটি কি দিয়ে তৈরি?
- কোন মুলতানি মাটি ভালো
- মুলতানি মাটির দাম কত?
- মুলতানি মাটি মুখে ব্যবহারের নিয়ম
- মুলতানি মাটি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
- চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে মুলতানি মাটি
- চুলের যত্নে মুলতানি মাটির ব্যবহার
- ঘামাচি দূর করতে মুলতানি মাটির ব্যবহার
- মুলতানি মাটির উপকারিতা
- মুলতানি মাটির অপকারিতা
- মন্তব্যঃ মুলতানি মাটি চেনার উপায়
মুলতানি মাটি চেনার উপায়
মুলতানি মাটি চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। মুলতানি মাটি ব্যবহার
করার আগে চিনে নিতে হবে। কারণ মুলতানি মাটি আসল না নকল জানা
জরুরী। মুলতানি মাটি আছে পাকিস্তান থেকে আসে, মুলতানি মাটি আমাদের দেশে
প্রায় বড় বড় শপিংমল প্রসাধনী দোকানে পাওয়া যায়। আর এই মাটির বর্তমান সময়ে
চাহিদা অনেক।
এ মাটির চাহিদা বেঁচে থাকায় অনেক অসাধু ব্যবসায়ী নকল মুলতানি মাটির আসল বলে
বিক্রি করে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে ফ্যাক্টরিতে তৈরি করে যা
আপনাদের ত্বকের জন্য এ মাটি যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতি করে থাকে। আসল মুলতানি
মাটি হবে আঠালো হাত দিয়ে নাড়লে বুঝা যাবে। বাজারে সাধারণত দুই ধরনের
মুলতানি মাটি পাওয়া যায় একটি হচ্ছে হলুদ রঙের ত্বকের যত্নে ব্যবহার হয় বেশি
আর ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে।
মুলতানি মাটি যখন প্যাকেজিং করা হয় বাণিজ্যিকভাবে বড় বড় কোম্পানি নানা ধরনের
ঘ্রাণ মুলতানি মাটির সাথে সংযুক্ত করে দেয়। তাই আপনাকে জেনে বুঝে নিতে হবে
এক্ষেত্রে আপনি মনে রাখবেন খুব ভালোভাবে প্যাকেট করা মুলতানি মাটি নকল
মুলতানি মাটির থেকে গুণগত মান সম্পূর্ণ এবং উৎকৃষ্ট মানের হবে। তাই আপনি যদি
মুলতানি মাটি নিতে চান তাহলে বড় বড় শপিংমল ও প্রসাধানি দোকানে নেবেন তাহলে
আসল মুলতানি মাটি পাবেন।
মুলতানি মাটির ইতিকথা
মুলতানি মাটি চেনার উপায়, মুলতানি মাটি এমন এক বিশেষ ধরনের মাটি যেটা সব
জায়গায় পাওয়া যায় না তবে যেখানে পাওয়া যায় অল্প পরিমাণে সেটা প্রাকৃতিক
নিয়মে সেখানে সৃষ্টি হয়।। মুলতান নামে এক শহর ছিল। এ মুলতানি মাটি মুলতান
শহরে ১৮০০ শতাব্দীতে সর্ব প্রথম এই মাটির সন্ধান পাওয়া যায়। এ মুলতানি
মাটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ উপাদান যেমনঃ আয়রন, ক্যালসিয়াম,
সিলিকা, ক্যালসাইট, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদিতে ভরপুর। এই মুলতানি মাটির
নাম দেওয়া হয় মুলতান শহরের নাম অনুসারে।
পাকিস্তানের মুলতান শহরের অধিবাসীরা মুলতানি মাটির সর্বপ্রথম ব্যবহার করতেন। এই
শহরে মাটি খনন করার সময় সংযুক্ত কাদামাটি দলা পেয়েছিল। তখনকার সময় সেই
শহরের মানুষেরা কোন পশম বা উল পরিষ্কার করতে মাটি এবং নানা রকমের গাছের রস
মেশাতেন। তাই তারা একদিন হঠাৎ করে লক্ষ্য করেন যে এই বিশেষ ধরনের মুলতানি
মাটি এবং পশম একসাথে ভিজিয়ে রাখলে খুব তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হয়
পশম। সে তখন থেকে মুলতানি মাটি ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়।
তারপর থেকে ত্বকের যত্নে, চুলের যত্নে, ত্বক থেকে ভাব তৈলাক ভাব দূর করতে,
শরীরের ক্ষতস্থান বা পোড়া জায়গায় মাটি লাগালে ভালো ফালাফাল পাওয়া
যায়। তারপর থেকে দিন দিন মুলতানি মাটির জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি
পায়। আর বিশেষ করে এই মাটি সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহার করা হয় এছাড়াও চুলের
যত্নে ব্যবহার করা হয়।
মুলতানি মাটি কি দিয়ে তৈরি?
মুলতানি মাটি হচ্ছে কাদামাটি যা ফুলারস নামে পরিচিত। মুলতানি মাটিতে
রয়েছে সেলিকেট অ্যালুমিনিয়াম ও হাইড্রেট এছাড়া ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড ও
ক্যালসিয়াম মতো উপাদান। মুলতানি মাটির পরিচিত উচ্চ শোষণ ক্ষমতার জন্য এই মাটি
ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল এবং ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।
মুলতানি মাটিতে যেসব উপাদান ব্যবহৃত হয়
সেলিকেট, অ্যালুমিনিয়াম ও হাইড্রেটেড
এইগুলো মুলতানি মাটির মূল উপাদান যা মাটিকে শোষণকারী বৈশিষ্ট্য হিসেবে
সাহায্য করে।
ক্লোরাইড ও ম্যাগনেসিয়াম
মুলতানি মাটিকে এই উপাদানটি উপস্থিতি রেখে এর কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলতে
সাহায্য করে।
বেন্টোনাইট ও ক্যালসিয়াম
এটি মূলত কাদামাটি গঠন এবং বৈশিষ্ট্য তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে মুলতানি
মাটিকে।
মুলতানি মাটি মূলত পাকিস্তান মুলতান শহর থেকে আসে, সুলতান শহর নামে এ
মাটির নামকরণ করা হয় মুলতানি মাটি। এ মাটি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি যা
মূলত ত্বকে ও তুলে যত্নে ব্যবহৃত হয়ে থাকে মুলতানি মাটি।
কোন মুলতানি মাটি ভালো
ভালো মুলতানি মাটির নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রথমে প্রাকৃতিক মুলতানি মাটি নিশ্চিত করুন এবং খাঁটি কিনা যা ত্বকের জন্য
নিরাপদ। আর আপনি দেখে নিবেন মুলতানি মাটির রং এবং টেক্সচার এই মাটি
হালকা রঙের হওয়া উচিত আর গুড়ো হওয়া বাঞ্ছনীয়। এছাড়াও প্রস্তুতকারক ও
প্যাকেজিং ছবি দেখে নিশ্চিত করুন। তাহলে জেনে নেওয়া যাক মুলতানি মাটি
নির্বাচনের সময় কোন কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
মুলতানি মাটি নির্বাচনের সময় যে বিষয়ে মনে রাখা উচিত
প্রাকৃতিক এবং খাটিঃ আপনি প্রথমে নিশ্চিত করুন এই মাটিটি প্রাকৃতিক এতে
কোন রাসায়নিক পদার্থ মেশানো নেই।
টেক্সচারঃ মুলতানি মাটি হালকা রং ও ধূসর হবে। এ মাটি খুব বেশি
দানাদার হলে শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
ব্যবহারের উদ্দেশ্যঃ মুলতানি মাটি ত্বকের যত্নে অনেক উপকারী। তবে শুষ্ক
ও রুক্ষ ত্বকে ব্যবহারে গোলাপজল বা দুধ মিশিয়ে ব্যবহার করবেন।
ব্রান্ড এবং প্রস্তুতকারক ও ব্যবহারের নিয়মঃ মুলতানি মাটি বিস্বস্ত ব্র্যান্ড
থেকে নেওয়া ভালো যাতে পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে যানা যায়। আর
নিদর্শনী মেনে তাকে ব্যবহার করবেন।
তবে মুলতানি মাটি ব্যবহারের আগে হাতের এক অংশে দিয়ে চেক করে নিন।
কোনরকম সমস্যা বা এলার্জি হয় কিনা যদি না হয় তাহলে এটি ব্যবহারের উপযোগী
মুলতানি মাটির দাম কত?
মুলতানি মাটির দাম নির্ভর করে সাধারণত প্যাকিং এবং পরিমাণের উপর। তাই এই মাটির
দাম ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে ১০০ গ্রাম মুলতানি মাটির দাম ৩০ থেকে ৪০ টাকা
হতে পারে। আবার প্যাকেজিং ও গুণগত মানের কারণে ১০০ গ্রাম মুলতানি মাটি দাম
৭০ থেকে ৮০ টাকা হতে পারে।
মুলতানি মাটি মুখে ব্যবহারের নিয়ম
মুলতানি মাটি মুখে ব্যবহারের নিয়ম কি জানেন? অনেকেই এই নিয়ম জানেন
না। তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক মুলতানি মাটি কিভাবে মুখে ব্যবহার করলে
ভালো ফলাফল পাওয়া যায় সে সম্পর্কে।
মুলতানি মাটি আপনি ফেসওয়াস বা সাবানের পরিবর্তে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে
পারেন। কারণ মুলতানি মাটি প্রাকৃতিকভাবে ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে থাকে।
আপনার মুখ ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিবেন এরপরে মুখে মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক
ব্যবহার করবেন। আর আপনার যদি মুখে ধুলো বালি না থাকে তাহলে মুখ ধুয়ে
মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক ব্যবহার করতে পারবেন।
আর আপনি যদি নরমালি মুখে মাখতে চান মুলতানি মাটি। তাহলে পরিষ্কার পাত্রে দুই
থেকে তিন চামচ মুলতানি মাটি সাথে পানি মিশিয়ে পেস্ট করে নিবেন। তারপরে মুখে
মেখে নিবেন এরপরে 10 থেকে 15 মিনিট পর মুখ ধুয়ে নিবেন পানি দিয়ে।
আর আপনি মুখে মুলতানি মাটি মাখার পর সূর্যের আলো কাটছে না যাওয়ার চেষ্টা
করবেন।
মুলতানি মাটি মুখে যে কোন সময় সকালে বা রাতে ব্যবহার করা যায়।
আর আপনি অবশ্যই মুলতানি মাটি মুখে দেওয়ার সময় কথা না বলার চেষ্টা করবেন। কারণ
কথা বললে মুখে বলিরেখা দেখা দিতে পারে।
শুষ্ক ত্বক যাদের রয়েছে তারা সপ্তাহে দুইবার মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক তৈরি
করে মুখে ব্যবহার করতে পারেন।
আর আপনাদের যাদের তৈলাক্ত ত্বক রয়েছে তারা অবশ্যই সপ্তাহে দুই থেকে
তিনবার মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক ব্যবহার করবেন।
মুলতানি মাটি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
আপনারা অনেকে জানতে চান মুলতানি মাটি দিয়ে কিভাবে ফর্সা হওয়া যায়? বাতাসের
আদ্রতা বেড়ে যায় গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরমে এ বাতাসের কারণে
ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। এর ফলে ত্বক অনেকের ই অনেক বেশি ঘেমে যায়
যার ফলে মুখে ব্রণের প্রবণতা বেড়ে যায়। আর এই তাপমাত্রার কারণে আপনার
তার অনেকটা নিস্তেজ হয়ে যায়। তবে আপনাদের যাদের তৈলাক্ত
ত্বক রয়েছে তাদের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। তাই মুলতানি মাটি দিয়ে
ফর্সা হওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক
আপনাদের যাদের তৈলাক্ত ত্বক রয়েছে তারা মুলতানি মাটির সাথে গোলাপজল মিশিয়ে
ফেসপ্যাক তৈরি করে মুখে ব্যবহার করবেন এটি খুবই কার্যকরী। এই
ফেসপ্যাক আপনার ত্বকের এইচ এর মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করবে আর আপনার ত্বকের
অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করবে। তাহলে এই
ফেসপ্যাকটি তৈরি করার নিয়ম জেনে নেওয়া যাক।
উপকরণ সমূহ
১ থেকে ২ চামচ মুলতানি মাটি
২ চামচ গোলাপ জল
১ থেকে ২ ফোটা লেবুর রস
প্রস্তুত প্রণালী এবং ব্যবহারের নিয়ম
একটি পরিষ্কার পাত্র নিবেন এরপরে ২ চামচ মুলতানি মাটি ১ থেকে ২ ফোটা
লেবুর রস ২ চামচ গোলাপ জল একসাথে মিশিয়ে তৈরি করে ফেলুন ফেসপ্যাক। এই
ফেসপ্যাকটি একটি ব্রাশের সাহায্যে মুখে এবং গলায় ভালোভাবে ব্যবহার
করুন। তারপরে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর আপনার ত্বকের টানটান ভাব জলে আসবে তখনই
পরিষ্কার পানি দিয়ে মাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। আর আপনি ফেস প্যাকটি সপ্তাহে
একবার করে ব্যবহার করবেন এতে করে আপনার তৈলাক্ত ভাব অনেকটাই কমে যাবে এবং
ত্বকের চিটচিটে ভাব কমে যাবে।
সতর্কতা
এই ফেসপ্যাকে বেশি লেবুর রস ব্যবহার করা যাবে না।
আর এই ফেসপ্যাক মুখে লাগানোর পর সূর্যের আলোর কাছে যাওয়া যাবে না।
শুষ্ক ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক
আপনারা অনেকে মনে করছেন যে তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটি যেহেতু কাজ করছে
সেহেতু শুষ্ক ত্বকে কাজ নাও করতে পারে। আপনি এটা ভুল ভাবছেন
শুষ্ক ত্বকে মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক ব্যবহার করলে ভিতর থেকে পরিষ্কার হয় এবং
সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও এছাড়াও আপনার ত্বকের রক্তের সঞ্চালন বৃদ্ধি
করতে সাহায্য করে। তাহলে এ ফেসপ্যাক বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জানা যাক।
উপকরণ
২ চামচ মুলতানি মাটি
১ চামচ এলোভেরা জেল
১ চামচ গোলাপজল
১ চামচ মধু
২-৩ টেবিল চামচ দুধ
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারের নিয়ম
একটি পরিষ্কার পাত্র নিয়ে,২ চামচ মুলতানি মাটি ১ চামচ এলোভেরা জেল
১ চামচ গোলাপজল ১ চামচ মধু ২-৩ টেবিল চামচ দুধ এই উপকরণগুলো
ভালোভাবে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপরে আপনি আপনার তাকে এই
পেজটি ভালোভাবে মুখে লাগিয়ে নিন লাগানোর ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে
ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ত্বকের জন্য এই ফেসপ্যাক হাইড্রেট রাখতে
সাহায্য করে।
সতর্কতা
মুখে লাগানোর পর সূর্যের আলোতে যাবেন না।
মুখ ধুয়ে ফেলার পর অবশ্যই মশ্চারাইজার মুখে লাগাবেন।
ট্যানিং দূর করার জন্য মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক
আপনাদের অনেকেরই রোদে ত্বকে দাগ পড়ে। আর রোদে না গেলে কোন উপায় নাই এই
দাগগুলো উঠাতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন মুলতানি মাটি। তাই
কিভাবে মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক ব্যবহার করলেন এ দাগগুলো উঠে যাবে সে
সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
উপকরণ
১ চামচ এলোভেরা জেল
১-২ চামচ মুলতানি মাটি
১ চামচ টক দই
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারের নিয়ম
একটু পরিষ্কার পাত্র নিয়ে ১ চামচ এলোভেরা জেল, ১-২ চামচ মুলতানি
মাটি, ১ চামচ টক দই একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিতে
হবে। এই পেস্ট ব্রাশের সাহায্যে মুখে এবং ঘাড়ে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে
হবে এরপরে ১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এ
ফেসপ্যাক অনেক পুরনো দাগ তুলতে সাহায্য করে। আর ত্বকের সৌন্দর্য
বৃদ্ধি করে।
সতর্কতা
এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করতে হবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা ঠিক রাখতে মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক
ত্বকের উজ্জ্বলতা ঠিক রাখতে মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক অনেক কার্যকরী। এই ফেসপ্যাক
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক এর
ফেসপ্যাক টি বানানোর নিয়ম।
উপকরণ
১ চামচ দই
১-৩ চামচ মুলতানি মাটি
ডিমের সাদা অংশ
প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারের নিয়ম
একটি পরিষ্কার পাত্রে ১ চামচ দই, ১-৩ চামচ মুলতানি মাটি, ডিমের সাদা
অংশ এসব উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপরে মুখে লাগিয়ে ১০ থেকে
১৫ মিনিট পরে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে মুলতানি মাটি
আপনি কি জানেন মুলতানি মাটি চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে কতটা
কার্যকরী। এই মুলতানি মাটি ব্যবহারের মাধ্যমে চোখের নিচের কালো দাগ দূর
করার পাশাপাশি চোখ ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে। তাহলে জেনে নেওয়া যাক
চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে মুলতানি মাটি ব্যবহার সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃ
আপনি মুলতানি মাটির সাথে শসা কেটে চোখের নিচের কালো দাগে লাগিয়ে রাখবেন ১০
থেকে ১৫ মিনিট পরে শুকিয়ে আসলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে
হবে। এইভাবে কয়েকদিন মুলতানি মাটি ব্যবহার করলে চোখের নিচের কালো দাগ
গুলো দূর হয়ে যাবে।
চোখের কালো দাগ দূর করতে মুলতানি মাটির সাথে টক দই পরিমাণ মতো একসাথে মিশিয়ে
চোখের নিচে ভালোভাবে লাগিয়ে নিবেন। এরপরে শুকিয়ে গেলে ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন
এতে করে আপনার চোখের দাগ তুলতে সাহায্য করবে এবং চোখ মসৃণ হবে।
মুলতানি মাটির সাথে কাজু বাদাম এবং গ্লিসারিন একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট
তৈরি করে নিবেন এরপরে চোখের নিচে ভালোভাবে লাগিয়ে নিবেন শুকানোর পরে এটি
ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন এতে করে আপনার চোখের নিচের কালো দাগ গুলো দূর করতে
সাহায্য করবে।
চুলের যত্নে মুলতানি মাটির ব্যবহার
মুলতানি মাটি চুলের যত্নে অনেকটা কার্যকরী। মুলতানি মাটি ব্যবহারের
ফলে চুলের অনেক সমস্যা দূর হয়ে থাকে যেমন ধরেন চুলের আগা ফাটা সমস্যা
দূর করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে। তাই
জেনে নেওয়া যাক চুলের যত্নে মুলতানি মাটির ব্যবহার সম্পর্কে।
চুল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
অনেকেরই অনেক সময় চুল কাটার পরে চুল বাধতে চায় না। তাই মুলতানি মাটির সাথে
এলোভেরা জেল ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপরে
পেস্ট টি মাথায় ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে
ধুয়ে ফেলুন এইভাবে ব্যবহার করুন কিছুদিন এতে করে আপনার চুল বৃদ্ধি
পাবে।
খুশকি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
খুশকি প্রতিরোধের জন্য মুলতানি মাটির সাথে এক চামচ মেথি বাটা ও তার সাথে লেবুর
রস একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে মাথার ঘোরায় লাগিয়ে নিন। তারপরে চুল শুকিয়ে গেলে
হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এইভাবে কয়েকদিন ব্যবহারের মাধ্যমে খুশকি
কমে যাবে।
চুলের ডগা ফাটা রোধ করতে সাহায্য করে
আপনার যদি চুলের ফাটা থাকে তাহলে চুলের স্বাভাবিক গ্রোথ কমে
যায়। তাই চুলের ডগা ফাটা রোধ করতে চাইলে মুলতানি মাটির সাথে টক দই একসাথে
মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। চুল শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে
ফেলুন। এভাবে কিছুদিন খুলে ব্যবহার করলে চুলের দাগা ফাটা রোদ হবে।
চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে
অনেকেরই পানিতে অতিরিক্ত আইরন থাকার কারণে চুল পড়া সমস্যা দেখা দেয়। খাবারের
বেশি তেল মসলাযুক্ত খাবার খেলে মাথার চুল পড়ে যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
এই চুল পড়া রোধ করতে আপনি মুলতানি মাটি এবং টক দই ও গোলমরিচের এইসব
উপাদান একসাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করুন। এরপরে চুল শুকিয়ে গেলে
ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
মাথার ত্বকের তৈলাক্ত দূরীকরণের
মাথার ত্বকের তৈলাক্ত দূরীকরণের আপনি ব্যবহার করতে পারেন মুলতানি মাটি ও রিঠার
গুরা, আর পানি একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ও চুলে মেখে নিন। তার পরে
২০থেকে ৩০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনার মাথার ত্বকের
তৈলাক্ত ভাব কমে যেতে সাহায্য করে।
চুলকে ঝলমলে ও মসৃণ করতে
চুলকে ঝলমলে ও মসৃণ করতে আপনি মুলতানের মাটির ব্যবহার করতে পারেন। তাই
আপনি মুলতানি মাটির সাথে মধু এবং পাতি লেবু একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে চুলে
মাখুন। তারপরে চুল ধুয়ে ফেলুন এতে করে আপনার চুল ঝলমলে মসৃণ এবং চুলের সিল্কি
ভাব লাগবে।
ঘামাচি দূর করতে মুলতানি মাটির ব্যবহার
গরমের সময় অনেকেরই ঘামাচি হয় এই ঘামাচি নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন।
ঘামাচি নিয়ে মানুষ বিব্রত ও অস্বস্তিকার বোধ করে। মাত্রাদিক্ত অতিরিক্ত গরমের
কারণে অনেকেরই হাতে-পায়ে গলায় পিঠে ঘামাচি হয়ে থাকে। এছাড়াও ঘামাচি বিভিন্ন
স্থানে হয়ে থাকে এ ঘামাচি থেকে মুক্তি পেতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন
মুলতানি মাটি তাহলে জেনে নেয়া যাক কিভাবে মুলতানি মাটি ঘামাচিতে ব্যবহার করলে
ঘামাচি ভালো হয়ে যায়।
তাই আপনাদের যাদের ঘামাচি আছে তারা চার টেবিল চামচ মুলতানি মাটি এবং দুই টেবিল
চামচ টক দই এর সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে যেখানে ঘামাচি আছে
ভালোভাবে লাগিয়ে নিবেন। তারপরে ২০ মিনিট হলে ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন ঠান্ডা
পানি দিয়ে এতে করে আপনার ঘামাচির সমস্যা অনেকটা কমে যাবে।
আবার ঘামাচির জন্য চার টেবিল চামচ মুলতানি মাটির সাথে গোলাপজাল একসাথে ভালোভাবে
মিশ্রের পেস্ট তৈরি করে নেবেন। এরপরে ঘামাচি স্থানগুলোতে লাগিয়ে
নিবেন শুকিয়ে যাওয়ার পর ধুয়ে নিবেন এতে আপনি ভাল ফলাফল পাবেন।
মুলতানি মাটির উপকারিতা
আমাদের অনেকেরই অজানা মুলতানি মাটি আমাদের জন্য কতটা উপকারী। তাহলে চলুন
মুলতানি মাটির উপকারিতা গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
মুলতানি মাটি ত্বকের মৃত কোষ ভিতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। আর
ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
মুলতানি মাটি ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমাতে সাহায্য করে।
মুলতানি মাটি ত্বক টানটান এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
এই মাটি ত্বকের বলিরেখা দূর করে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বল ফিরিয়ে আনতে
সাহায্য করে।
এছাড়াও ব্রণের কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
রোদে পুড়ে ত্বকে যে দাগ হয় সে দাগগুলো দূর করতে সাহায্য করে।
প্রাকৃতিক ক্লিনজার হিসেবে কাজ করে থাকে মুলতানি মাটি।
মুলতানি মাটি মাথার তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
ঘামাচির করতে মুলতানি মাটি আমাদের সাহায্য করেন।
চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
মুলতানি মাটির অপকারিতা
মুলতানি মাটির যেমন উপকারিতা রয়েছে তার পাশাপাশি অপকারিতা রয়েছে।
মুলতানি মাটি অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও
ভুলভাবে মুলতানি মাটি ব্যবহার করলে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাহলে এবার
জেনে নেওয়া যাক মুলতানি মাটির অপকারিতা গুলো।
মুলতানি মাটি ব্যবহারের সময় অবশ্যই আবহাওয়ার দিকে খেয়াল রাখবেন। ঠান্ডায়
মুলতানি মাটি পানির সাথে ভিজিয়ে মাখলে ত্বক আরো শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে
ওঠে।
মুলতানি মাটি আমাকে ব্যবহারের ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। তাই প্রাকৃতিক
মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ বাদাম তেল, মধু, এলোভেরা জেল
ইত্যাদি। মুলতানি মাটির ব্যবহারের পরে এই মশ্চারাইজার গুলো ব্যবহার না করলে
নির্দিষ্ট সময়ের আগে আপনার ত্বকে বুড়ো ভাব চলে আসবে।
তবে আপনাদের যাদের ত্বক সংবেদনশীল তারা অবশ্যই মুলতানি মাটি ব্যবহার থেকে
এড়িয়ে যাবেন। এই মুলতানি মাটি সংবেদনশিল ত্বকে ব্যবহার করলে ফুসকুড়ি
দেখা দিতে পারে। তাই মুলতানি মাটি ব্যবহারের আগে জেনে নিবেন।
অত্যাধিকভাবে ত্বকের মুলতানি মাটির ব্যবহারের ফলে ত্বক নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
আর যাদের ঠান্ডা সর্দি জনিত সমস্যা রয়েছে তারা অবশ্যই মুলতানি মাটির ব্যবহার
থেকে এড়িয়ে যাবেন। কারণ মুলতানি মাটি ঠান্ডা এই মাটি ব্যবহারের ফলে
আপনার আরো ঠান্ডা সর্দি বেড়ে যেতে পারে।
মন্তব্যঃ মুলতানি মাটি চেনার উপায়
পরিশেষে বলা যায় যে, এ মুলতানি মাটি মুলতান শহরে ১৮০০ শতাব্দীতে সর্ব প্রথম এই
মাটির সন্ধান পাওয়া যায়। এ মুলতানি মাটিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খনিজ
উপাদান যেমনঃ আয়রন, ক্যালসিয়াম, সিলিকা, ক্যালসাইট, ম্যাগনেসিয়াম
ইত্যাদিতে ভরপুর। মুলতানি মাটি আপনার ত্বকের ভেতর থেকে পুষ্টিরঘাটতি পূরণ
করতে সাহায্য করে। এই মাটির প্রাকৃতিক ক্লিনিজার হিসেবে কাজ করে থাকে আর
আপনার স্কিনকে সুস্থ ও সুন্দর সৌন্দর্য উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। চুলের যত্ন
বেস কার্যকরী।
নিজস্ব মতে মুলতানি মাটি চেনার উপায়, মুলতানি মাটি কেনার আগে অবশ্যই দেখে
কিনবেন। মুলতানি মাটি সাধারণত আঠালো হয় হাত দিয়ে নাড়লে বোঝা
যাবে এবং প্রাকৃতিক গুনে গুণান্বিত এর রং হলুদ এবং হালকা ধূসর হয়। যা
ত্বকের যত্নে এবং চুলের যত্নে বেশ কার্যকরী উপাদান।
সাবিনা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url